নয়াদিল্লি, ৬ সেপ্টেম্বরঃ
ভারতের কনস্টিটিউশন ক্লাব, আজ এক অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী রইলো। সাক্ষী রইল দেশ। পজিটিভ বার্তার উদ্যোগে, তাদের ন্যাশনাল অ্যাওয়ারনেস কনক্লেভে, দেশের অন্যতম এক সবুজের অভিযানের সাফল্যের সাক্ষী থাকলো সকলে।
যা একসময় যা কেবল অবিশ্বাস্য সাহসী ভাবনা বলে মনে হয়েছিল, আজ তা পরিণত হয়েছে এক জনআন্দোলনে। কৃষক, ছাত্র-ছাত্রী, নারী উদ্যোক্তা এবং সারা দেশের অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবকের একত্র প্রচেষ্টায় শুধু গাছই লাগান নি, তাদের সঙ্গে লালিত হয়েছে এক সুস্থ ও স্থায়ী ভারতের স্বপ্ন।
“এই সাফল্য কেবল সংখ্যার কথা নয়, প্রতিটি চারাগাছ হল আমাদের পৃথিবীর প্রতি যত্ন, সাহস ও দায়িত্ববোধের প্রতীক। এটা পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার এবং আগামী প্রজন্মের প্রতি আমাদের কর্তব্য পুনর্নিশ্চিত করার অঙ্গীকার,” বলে জানান পজিটিভ বার্তা-র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ডঃ মলয় পীট।
এদিনের সম্মেলনে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় নারী উদ্যোক্তাদের ভূমিকায়। দেশজুড়ে বহু নারী-নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে নানা কর্মসূচী ও ব্যবসা পরিচালনা এক অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। তাদের নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে যে পরিবেশ রক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন আসলে একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। “এরা শুধু নিজেদের পরিবারকে নয়, সমাজকেও রূপান্তরিত করছে, প্রকৃতির অভিভাবক হয়ে উঠছে,” বলে জানান মলয় পীট।
এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষক ও শিক্ষাবিদ ড. আয়নজিৎ সেন; জাতীয় নেতা ও নীতি বিশারদ ড. পরিমল কান্তি মণ্ডল; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের উপসচিব শ্রী সন্দীপ বর্মা; ভারসোল সলিউশনস-এর ডিরেক্টর মি. বৈভব পরাশর এবং শ্রী গঙ্গা রাম হাসপাতাল-এর সহ-পরিচালক ডাঃ সুরেশ সিংভি। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিকরাও—দৈনিক ভাস্কর-এর মি. মুকেশ কৌশিক, মিসাইল এক্সপ্রেস গ্রুপ-এর মি. এস.এইচ. শামস এবং সিনিয়র টেলিভিশন সাংবাদিক মিস আরতি রায়। এরা সকলেই জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে গণমাধ্যমের ভূমিকাকে সামনে আনেন।
এদিনের বক্তাদের এই বৈচিত্র্য আক্ষরিক অর্থেই প্রমান করেছে যে সমাজের সব ক্ষেত্রেই এই বৃক্ষরোপণ মিশনের প্রতি গভীর সমর্থন তৈরি হয়েছে। তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই আসলে সমগ্র সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সম্ভব নয়।
‘এক বছরে এক কোটি গাছ’ উদ্যোগের সবচেয়ে বড় শক্তি তার তৃণমূলস্তরের ভিত্তি। হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, চিকিৎসক, সমাজকর্মী এবং সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে গাছ লাগানো ও পরিচর্যায় যুক্ত হয়েছেন। এর মাধ্যমে শুধু সবুজ আচ্ছাদনই তৈরি হয়নি, জন্ম নিয়েছে সচেতনতা ও সম্মিলিত সামাজিক দায়িত্ববোধ।
অনেকের কাছে এই আন্দোলন হয়ে উঠেছে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। এক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক জানান, “যখন প্রথম চারাটি রোপণ করি, মনে হয়েছিল ভবিষ্যতের জন্য এক প্রার্থনা করছি। এখন ওটাকে বড় হতে দেখে মনে হয় আমি যেন নিজের থেকেও বড় কিছুর অংশ।”
এ ধরনের ভাবনা পুরো সম্মেলন জুড়ে ছড়িয়ে ছিল, যা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল—প্রকৃত পরিবর্তন শুরু হয় ছোট ছোট অথচ ধারাবাহিক যত্নশীল পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই।
তবে এদিনের কনক্লেভ শুধু সাফল্যের উদযাপন নয়, ছিল আগামী দিনের জন্য কর্মপন্থার আহ্বানও। আয়োজকরা ঘোষণা করেন, গ্রিন মিশন আরও সম্প্রসারিত হবে—নতুন নতুন সামাজিক ক্ষেত্রকে এই কর্মসূচীর সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য, এমন এক স্বনির্ভর পরিবেশ ব্যবস্থা তৈরি করা, যেখানে প্রতিটি গাছ হবে পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নের বৃহত্তর চক্রের অংশ।
দিনের শেষে এই কনক্লেভ হয়ে উঠল শুধু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মিলনক্ষেত্র নয়, বরং তাদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানোর মঞ্চ, যারা এই সবুজের অভিযানে হাত লাগিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার মুখে আজকের কনক্লেভ এক শক্তিশালী বার্তা দিল—সম্মিলিত কর্ম, সহমর্মিতা ও অধ্যবসায়ই গড়ে তুলতে পারে এক সবুজ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ।
TSMC: অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী রইলো গোটা দেশ। এক বছরে এক কোটি গাছ লাগানোর উদ্যোগ ত্রিপুরা শান্তি নিকেতন মেডিক্যাল কলেজের।
